1. abrajib1980@gmail.com : মো: আবুল বাশার রাজীব : মো: আবুল বাশার রাজীব
  2. abrajib1980@yahoo.com : মো: আবুল বাশার : মো: আবুল বাশার
  3. farhana.boby87@icloud.com : Farhana Boby : Farhana Boby
  4. mdforhad121212@yahoo.com : মোহাম্মদ ফরহাদ : মোহাম্মদ ফরহাদ
  5. shanto.hasan000@gmail.com : Rakibul Hasan Shanto : Rakibul Hasan Shanto
  6. masum.shikder@icloud.com : Masum Shikder : Masum Shikder
  7. shikder81@gmail.com : Masum shikder : Masum Shikder
  8. riyadabc@gmail.com : Muhibul Haque :

সম্পত্তির উপর নারীর অধিকার। মুসলিম ও হিন্দু আইন এবং একটি পর্যালোচনা

  • Update Time : বৃহস্পতিবার, ১৯ আগস্ট, ২০২১
  • ৪৯৯ Time View

সম্পত্তির উপর নারীর অধিকার। মুসলিম ও হিন্দু আইন এবং একটি পর্যালোচনা

 লতিফুর রহমান প্রামানিক, আইনজীবী।

(প্রথম কিস্তি)

সম্পত্তির উত্তরাধিকার মানুষের অন্যতম একটা সাংবিধানিক অধিকার। মানুষ মাত্রই সেই অধিকার লাভের অধিকারী। তবে সেই অধিকার কোন রাস্ট্র বা সরকার এর নিকট থেকে আসা নয়। সভ্যতার আলোয় যখন আলোকিত হচ্ছে জগৎ তখনই মানুষ তার সম্পত্তির উত্তরাধিকার নিয়ে আরও বেশি সচেতন আর সরব হয়ে উঠেছে। যুগে যুগে আইনের প্রসার আর ব্যাপ্তি হয়তো হু হু করে বাড়ছে কিন্তু এখনো সম্পত্তির উত্তরাধিকার এর সুত্র টা মানুষের পক্ষে আবিস্কার করা আজও সম্ভব হয়নি। অন্তত এই বিষয় টা নিয়ে ধর্মের উপর কেউ হাত দেওয়ার সাহস করেনি। তবে এর কারণ ও যথেষ্ট রয়েছে। যথেষ্ট ব্যাখ্যা ও রয়েছে।  অন্তত মুসলিম আইনের যদি কথা বলি পবিত্র আল কোরআনে বর্নিত উত্তরাধিকার নিয়ে সুরা নিসা’ য় পরিস্কার ভাবে  যে বর্নিত হয়েছে তা নিয়ে দুনিয়ার কোন মুসলিম আইনে আজও এক ইঞ্চি পরিমান ব্যতয় ঘটেনি। প্রায় ১৪০০ বছর আগে নাজিল হওয়া পবিত্র আল কোরআনে  নারী ও পুরুষের মধ্যে সম্পত্তির উত্তরাধিকার এর যে সমতা, ন্যায্যতা  প্রতিষ্ঠা পেয়েছে তা প্রস্নাতীত।

এটা সুরা নিসার ৩টি আয়াতে (৪:১১, ৪:১২ ও ৪:১৭৬) মৃতের সম্পত্তি বণ্টনের নীতি বর্ণিত হয়েছে।

يُوصِيكُمُ ٱللَّهُ فِىٓ أَوۡلَـٰدِڪُمۡ‌ۖ لِلذَّكَرِ مِثۡلُ حَظِّ ٱلۡأُنثَيَيۡنِ‌ۚ فَإِن كُنَّ نِسَآءً۬ فَوۡقَ ٱثۡنَتَيۡنِ فَلَهُنَّ ثُلُثَا مَا تَرَكَ‌ۖ وَإِن كَانَتۡ وَٲحِدَةً۬ فَلَهَا ٱلنِّصۡفُ‌ۚ وَلِأَبَوَيۡهِ لِكُلِّ وَٲحِدٍ۬ مِّنۡہُمَا ٱلسُّدُسُ مِمَّا تَرَكَ إِن كَانَ لَهُ ۥ وَلَدٌ۬‌ۚ فَإِن لَّمۡ يَكُن لَّهُ ۥ وَلَدٌ۬ وَوَرِثَهُ ۥۤ أَبَوَاهُ فَلِأُمِّهِ ٱلثُّلُثُ‌ۚ فَإِن كَانَ لَهُ ۥۤ إِخۡوَةٌ۬ فَلِأُمِّهِ ٱلسُّدُسُ‌ۚ مِنۢ بَعۡدِ وَصِيَّةٍ۬ يُوصِى بِہَآ أَوۡ دَيۡنٍ‌ۗ ءَابَآؤُكُمۡ وَأَبۡنَآؤُكُمۡ لَا تَدۡرُونَ أَيُّهُمۡ أَقۡرَبُ لَكُمۡ نَفۡعً۬ا‌ۚ فَرِيضَةً۬ مِّنَ ٱللَّهِ‌ۗ إِنَّ ٱللَّهَ كَانَ عَلِيمًا حَكِيمً۬ا (١١) ۞ وَلَڪُمۡ نِصۡفُ مَا تَرَكَ أَزۡوَٲجُڪُمۡ إِن لَّمۡ يَكُن لَّهُنَّ وَلَدٌ۬‌ۚ فَإِن ڪَانَ لَهُنَّ وَلَدٌ۬ فَلَڪُمُ ٱلرُّبُعُ مِمَّا تَرَڪۡنَ‌ۚ مِنۢ بَعۡدِ وَصِيَّةٍ۬ يُوصِينَ بِهَآ أَوۡ دَيۡنٍ۬‌ۚ وَلَهُنَّ ٱلرُّبُعُ مِمَّا تَرَكۡتُمۡ إِن لَّمۡ يَڪُن لَّكُمۡ وَلَدٌ۬‌ۚ فَإِن ڪَانَ لَڪُمۡ وَلَدٌ۬ فَلَهُنَّ ٱلثُّمُنُ مِمَّا تَرَڪۡتُم‌ۚ مِّنۢ بَعۡدِ وَصِيَّةٍ۬ تُوصُونَ بِهَآ أَوۡ دَيۡنٍ۬‌ۗ وَإِن كَانَ رَجُلٌ۬ يُورَثُ ڪَلَـٰلَةً أَوِ ٱمۡرَأَةٌ۬ وَلَهُ ۥۤ أَخٌ أَوۡ أُخۡتٌ۬ فَلِكُلِّ وَٲحِدٍ۬ مِّنۡهُمَا ٱلسُّدُسُ‌ۚ فَإِن ڪَانُوٓاْ أَڪۡثَرَ مِن ذَٲلِكَ فَهُمۡ شُرَڪَآءُ فِى ٱلثُّلُثِ‌ۚ مِنۢ بَعۡدِ وَصِيَّةٍ۬ يُوصَىٰ بِہَآ أَوۡ دَيۡنٍ غَيۡرَ مُضَآرٍّ۬‌ۚ وَصِيَّةً۬ مِّنَ ٱللَّهِ‌ۗ وَٱللَّهُ عَلِيمٌ حَلِيمٌ۬ (١٢)

অর্থঃ “আল্লাহ তোমাদেরকে তোমাদের সন্তানদের সম্পর্কে নির্দেশ দিচ্ছেন, এক ছেলের জন্য দুই মেয়ের অংশের সমপরিমাণ। তবে যদি তারা দুইয়ের অধিক মেয়ে হয়, তাহলে তাদের জন্য হবে, যা সে রেখে গেছে তার তিন ভাগের দুই ভাগ; আর যদি একজন মেয়ে হয় তখন তার জন্য অর্ধেক। আর তার মাতা পিতা উভয়ের প্রত্যেকের জন্য ছয় ভাগের এক ভাগ সে যা রেখে গেছে তা থেকে, যদি তার সন্তান থাকে। আর যদি তার সন্তান না থাকে এবং তার ওয়ারিস হয় তার মাতা পিতা তখন তার মাতার জন্য তিন ভাগের এক ভাগ। আর যদি তার ভাই-বোন থাকে তবে তার মায়ের জন্য ছয় ভাগের এক ভাগ। অসিয়ত পালনের পর, যা দ্বারা সে অসিয়ত করেছে অথবা ঋণ পরিশোধের পর। তোমাদের মাতা পিতা ও তোমাদের সন্তান-সন্ততিদের মধ্য থেকে তোমাদের উপকারে কে অধিক নিকটবর্তী তা তোমরা জান না। আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়। আর তোমাদের জন্য তোমাদের স্ত্রীগণ যা রেখে গেছে তার অর্ধেক, যদি তাদের কোন সন্তান না থাকে। আর যদি তাদের সন্তান থাকে, তবে তারা যা রেখে গেছে তা থেকে তোমাদের জন্য চার ভাগের এক ভাগ। তারা যে অসিয়ত করে গেছে তা পালনের পর অথবা ঋণ পরিশোধের পর। আর স্ত্রীদের জন্য তোমরা যা রেখে গিয়েছ তা থেকে চার ভাগের একভাগ, যদি তোমাদের কোন সন্তান না থাকে। আর যদি তোমাদের সন্তান থাকে তাহলে তাদের জন্য আট ভাগের এক ভাগ, তোমরা যা রেখে গিয়েছে তা থেকে। তোমরা যে অসিয়ত করেছ তা পালন অথবা ঋণ পরিশোধের পর। আর যদি মা বাবা এবং সন্তান-সন্ততি নাই এমন কোন পুরুষ বা মহিলা মারা যায় এবং তার থাকে এক ভাই অথবা এক বোন, তখন তাদের প্রত্যেকের জন্য ছয় ভাগের একভাগ। আর যদি তারা এর থেকে অধিক হয় তবে তারা সবাই তিন ভাগের এক ভাগের মধ্যে সমঅংশীদার হবে, যে অসিয়ত করা হয়েছে তা পালনের পর অথবা ঋণ পরিশোধের পর। কারো কোন ক্ষতি না করে। আল্লাহর পক্ষ থেকে অসিয়তস্বরূপ। আর আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সহনশীল।” [1]

سۡتَفۡتُونَكَ قُلِ ٱللَّهُ يُفۡتِيڪُمۡ فِى ٱلۡكَلَـٰلَةِ‌ۚ إِنِ ٱمۡرُؤٌاْ هَلَكَ لَيۡسَ لَهُ ۥ وَلَدٌ۬ وَلَهُ ۥۤ أُخۡتٌ۬ فَلَهَا نِصۡفُ مَا تَرَكَ‌ۚ وَهُوَ يَرِثُهَآ إِن لَّمۡ يَكُن لَّهَا وَلَدٌ۬‌ۚ فَإِن كَانَتَا ٱثۡنَتَيۡنِ فَلَهُمَا ٱلثُّلُثَانِ مِمَّا تَرَكَ‌ۚ وَإِن كَانُوٓاْ إِخۡوَةً۬ رِّجَالاً۬ وَنِسَآءً۬ فَلِلذَّكَرِ مِثۡلُ حَظِّ ٱلۡأُنثَيَيۡنِ‌ۗ يُبَيِّنُ ٱللَّهُ لَڪُمۡ أَن تَضِلُّواْ‌ۗ وَٱللَّهُ بِكُلِّ شَىۡءٍ عَلِيمُۢ (١٧٦)

অর্থঃ “তারা তোমার নিকট ব্যবস্থা প্রার্থনা করছে, তুমি বলঃ আল্লাহ তোমাদেরকে পিতা-পুত্রহীন সম্বন্ধে ব্যবস্থা দান করেছেন। যদি কোন ব্যক্তি নিঃসন্তান অবস্থায় মারা যায় এবং তার ভগ্নী থাকে তাহলে সে তার পরিত্যক্ত সম্পত্তি হতে অর্ধাংশ পাবে; এবং যদি কোন নারীর সন্তান না থাকে তাহলে তার ভাইই তদীয় উত্তরাধিকারী হবে; কিন্তু যদি দুই ভগ্নী থাকে তাহলে তাদের উভয়ের জন্য পরিত্যক্ত বিষয়ের দুই তৃতীয়াংশ এবং যদি তার ভাই ভগ্নী-পুরুষ ও নারীগণ থাকে তাহলে পুরুষ দুই নারীর তুল্য অংশ পাবে; আল্লাহ তোমাদের জন্য বর্ণনা করছেন যেন তোমরা বিভ্রান্ত না হও, এবং আল্লাহ সর্ব বিষয়ে মহাজ্ঞানী।” [2]

পবিত্র আল কোরআনে এমন সুত্র পাওয়ায় মুসলিমদের অন্তত সম্পত্তির উত্তরাধিকার নিয়ে আর মাথা ঘামানোরই দরকার পড়েনি কোন কালে। তবে হ্যাঁ মাঝে মাঝে জ্ঞানপাপী আর নাস্তিক সম্প্রদায় আওয়াজ তোলে নারীর সম্পত্তির উত্তরাধিকার নিয়ে। কিন্তু ইসলাম নারীর অধিকার যতটা রক্ষাকারী অন্য কোন  ধর্মে তা রক্ষা করা হয়নি বলে এখনো অসন্তোষ রয়েছে কিছু কিছু সম্প্রদায়ের মধ্যে। সম্প্রতি ভারতীয় সুপ্রিম কোর্ট হিন্দু আইনে নারীর সম্পত্তির উত্তরাধিকার নিয়ে এক যুগান্তকারী রায় প্রদান করে সমতা প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেছে। তা আলোচনা শেষ অংশে ব্যাখ্যা করতে চাই। তবে বাংলাদেশের হাইকোর্ট ও বিধবা নারীর স্বামীর সম্পত্তির উপর অধিকার নিয়ে আরেকটি রায় প্রদান করেছে। সেই বিষয় নিয়ে শেষ অংশে আলোকপাত করব।
মুসলিম আইন আর হিন্দু আইন ছাড়াও আরও কিছু বৃহৎ সম্প্রদায়ের সম্পত্তি তাহাদের নিজস্ব ধর্ম মতে সম্পত্তির উত্তরাধিকার নিরুপিত হয়ে থাকে।

খ্রিষ্টান উত্তরাধিকার আইন ঃ
আমাদের দেশে খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের উত্তরাধিকার নিয়ন্ত্রিত হয় সাকসেশন অ্যাক্ট ১৯২৫-এর মাধ্যমে৷ কোনো মৃত ব্যক্তির উত্তরাধিকারী হওয়ার ক্ষেত্রে ছেলে এবং মেয়ে একই মর্যাদার অধিকারী, অর্থাৎ মৃত ব্যক্তির সম্পত্তিতে তারা সমান অংশ লাভ করে৷ তবে মৃত ব্যক্তি যদি সম্পত্তি অন্য কারো নামে উইল করে যান, তাহলে সম্পত্তি উত্তরাধিকারীদের মধ্যে বণ্টিত হবে না৷

বৌদ্ধ উত্তরাধিকার আইনঃ
বাংলাদেশে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী জনগোষ্ঠী হিন্দু আইন অনুযায়ী তাদের উত্তরাধিকার নির্ধারণ করে থাকে৷

নৃ-গোষ্ঠীদের উত্তরাধিকার আইনঃ
বেশিরভাগ নৃ-গোষ্ঠী সম্প্রদায়ের প্রথা অনুযায়ী নারীদের পিতা-মাতা ও স্বামীর সম্পদের মালিকানায় উত্তরাধিকারের কোনো পদ্ধতি নেই৷ এ কারণে এ নারীরা সম্পত্তির অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন৷ পার্বত্য ভূমি কমিশন আইনের সংশোধনী পাস হওয়ার পরও নৃ-গোষ্ঠীর নারীরা আদৌ কোনো সুফল পাবেন কিনা, তা নিয়ে তাদের মাঝে সংশয় আছে৷

কিন্তু হিন্দু সম্প্রদায়ের পবিত্র গ্রন্থে সম্পত্তির উত্তরাধিকার নিয়ে বহু জায়গায় নারী ও পুরুষের অধিকার সম্পর্কে বলা থাকলেও বাংলাদেশ এবং ভারতীয় হিন্দু উত্তরাধিকার আইনে তা উপেক্ষিত হয়েছে। এই নিয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে অসন্তোষ বহুদিনের।  তবুও উভয় দেশের কোন সরকার সেই অসন্তোষ দূর করতে কখনো অগ্রসর হয় নি।
যদি ও উত্তরাধিকার আইন সম্পুর্ন রুপে ধর্ম থেকে উৎপত্তি।

সনাতন ধর্মে নারীর সম্পদের উত্তরাধিকার সম্পর্কে মনুস্মৃতিতে বলেছে ,,এমন কি পবিত্র বেদ হতেও কন্যা সন্তান কে অবহেলা করেনি ,, পবিত্র বেদের নারী ঋষিকা ২৮ জনের নাম পাওয়া যায় যা পবিত্র বেদ মন্ত্রের দ্রষ্টা ,, সেই দিক থেকে সনাতন ধর্মে নারীর জয়গান থাকার কথা কিন্তু বাস্তবে তা নেই বললেই চলে । তাহলে আসুন মনুস্মৃতি নারীর সম্পদের অধিকার নিয়ে রেফারেন্স দেখি —-
যথৈবাত্মা তথা পুত্রঃ পুত্রেণ দুহিতা সমা ।তস্যামাত্মানি তিষ্ঠন্ত্যাং কথমন্যো ধনং হরেৎ ।।
অনুবাদ:- নিজেও যেমন পুত্রও সেইরকম অর্থাৎ আত্মা ও পুত্রতে প্রভেদ নেই , আবার দূহিতা অর্থাৎ পুত্রিকা পুত্রেরই সমান । সেই পুত্রিকা-পুত্র স্বয়ং বিদ্যমান থাকতে অন্য কোনও ব্যক্তি ঐ পুত্রিকা পিতার ধন গ্রহনীয় ,,। মনুস্মৃতি :-৯/১৩০ ।

অবিশেষেণ পুত্রাণাং দায়ো ভবতি ধর্মতঃ ।মিথুনানাং বিসর্গাদৌ মনু স্বায়ম্ভুবোহব্রবীৎ ।।
অনুবাদঃ- স্বায়ংভুব মনু সৃষ্টির প্রারম্ভে বলেছেন , পিতৃধনে পুত্র ও কন্যার সমান অধিকার , এ বিষয়ে পুত্র ও কন্যার মধ্যে কোন ভেদ নেই । (নিরুক্ত–৩/৪/) নিরুক্তকার যাস্ক ৭০০ খ্রীষ্ট পূর্বাব্দ জনন্যাং সংস্থিতায়ান্তু সমং সর্বে সহোদরাঃ ।ভজেরন্মাতৃকং রিক্থং ভগিন্যশ্চ সনাভয় ।।
অনুবাদ]:- মাতার মৃত্যু হলে তার যা কিছু স্ত্রীধন আছে তা সহোদর ভ্রাতারা ( অর্থাৎ মৃত্যের, যে মারা গেছেন তার পুত্ররা ) এবং সহোদর ভগিনীরা ( মৌতার বা যে মারা গেছেন তার কণ্যারা) সমান সমান ধন সম্পদ ভাগ করে নিবে । (মনুস্মৃতি ৯/১৯২)

এখানে কিন্তু কোথাও বলা হয়নি সম্পদের ১/২ অংশের ভাগ কন্যারা বা এক পুত্র সন্তানের সমান সম্পদ দুই কন্যা সন্তানের সমান সম্পদ ধন পাবে । যা ইসলামে বলা আছে ।
অপর দিকে যদি কোনো মাতা সম্পদ রেখে মারা যায় তার যে সম্পদ আছে তাঁর কন্যার সন্তানেরা সম্পদ পাবে । অর্থাৎ মৃত্যুপ্রাপ্তিকার নাতি নাতনি সম্পদের অংশ পাবে ।সেই আলোকে নিচের রেফারেন্সে বলা আছে ,,
যাস্তাসাং স্যর্দুহিতরস্তাসামপি যথার্হতঃ ।মাতামহ্যা ধনাৎ কিঞ্চিৎ প্রদেয়ং প্রীতিপূর্বকম্ ।

অনুবাদ:- ঐ কন্যার যদি অবিবাহিত কন্যা ( মৃত্যুপ্রাপ্তিকার নাতনি ) থাকে তাদেরও মাতামহীর ( মৃত্যুপ্রাপ্তিকার ) ধন থেকে কিছু কিছু অংশ দিয়ে সম্মানিত ও সন্তুষ্ট রাখবে । (মনুস্মৃতি:- ৯/১৯৩)

কন্যা স্ত্রীধন অধিকার লাভ করে ছয় প্রকার যেমন ১/অধ্যগ্নি ,২/ অধ্যাবাহনিক, ৩/ প্রীতিদত্ত, ৪/ মাতৃদত্ত, ৫/ ভ্রাতৃদত্ত ও ৬/ পিতৃদত্ত । এই ছয় প্রকার ধন সম্পদের অধিকার একমাত্র কন্যাই পাবে ও কন্যার সন্তানেরা সমান সমান ভাগে ভাগ পাবে যদি কন্যার মৃত্যু হয় ,, ।
তাহলে দেখা যাক রেফারেন্স কি বলে !অধ্যগ্নধ্যাবাহনিকং দত্তঞ্চং প্রীতিকর্মণি ।ভ্রাতৃমাতৃপিতৃপ্রাপ্তং ষড়বিধং স্ত্রীধনং স্মৃতম্ ।।

অনুবাদ:- স্ত্রীধন ছয় প্রকার । অধ্যগ্নি:- স্ত্রীর বিবাহকালে পিতাপ্রভৃতিদের দ্বারা দত্ত ধন । অধ্যাবাহনিক :- যে ধন পিতৃগৃহ থেকে পতিগৃহে আসার সময় যে ধন নিয়ে আসে সেই ধন । প্রীতিদত্ত ধন:- এই ধন হলো রতিকালে বা অন্যসময় পতি কতৃক প্রীতিপূর্বক যে ধন স্ত্রীকে প্রদত্ত করা হয় সেই ধন ।তারপরে ভ্রাতৃদত্ত ধন , মাতৃদত্ত ধন ,পিতৃদত্ত ধনই স্ত্রীধন বলে । ( মনুস্মৃতি:-৯/১৯৪)
তারপর বিবাহের পরে যে ধন প্রাপ্ত হয় তার রেফারেন্স নিম্নরুপ ।অন্বাধেয়ঞ্চ যদ্দত্তং পত্যা প্রীতিন চৈব যৎ ।পত্যৌ জীবতি বৃত্তায়াঃ প্রজায়াস্তদ্ধনং ভবেৎ ।
অনুবাদ:- বিবাহের পর পিতা , মাতা, স্বামী, পিতৃকুল, এবং ভর্তৃকুল থেকে লব্ধ যে ধন তাকে সাধারণ ভাবে অন্বাধেয় বলা হয় । স্ত্রীলোকের অন্বাধেয় ধন এবং তার পতিকতৃর্ক তাকে প্রীতিপূর্বক প্রদত্ত যে ধন তাও স্বামীর জীবদ্দশায় স্ত্রীলোকের মৃত্যু হলে তার সন্তানেরা পাবে । ( মনুস্মৃতি :-৯/১৯৫)

এবার নিঃসন্তান অবস্থায় কোনো স্ত্রী মারা গেলে তার প্রাপ্ত সম্পদের অধিকারী কে হবে তার রেফারেন্স দেখুন ।
ব্রাহ্মদৈবার্ষগান্ধর্বপ্রাজাপত্যেষু যদ্বসু ।অপ্রজায়ামতীতায়াং ভর্তুরেব তদিষ্যতে ।।
অনুবাদ :- ব্রাহ্ম, দৈব , আর্ষ, গান্ধর্ব এবং প্রাজাপত্য ,এই পাঁচ প্রকার বিবাহে লব্ধ যে স্ত্রীধন ,তার সবই কোনও স্ত্রীলোক নিঃসন্তান অবস্থায় মারা যায় তার সম্পদ তার স্বামীই পাবে । (মনুস্মৃতি:-৯/১৯৬)
পরের রেফারেন্স দেখা যাক ।
যৎ তস্যাঃ স্যাদ্ধনং দত্তং বিবাহেষ্বাসুরাদিষুব।অপ্রজায়ামতীতায়াং মাতাপিত্রোস্তদিষ্যতে ।।
অনুবাদ:- আসুর বিবাহ ( কন্যার অভিভাবকে শুক্ল দিয়ে যে বিয়ে হয় ) রাক্ষস বিবাহ ( যে বিবাহ কন্যাকে অপহরণ করে বলপূর্বক যে বিবাহ হয় ) পৈশাচ বিবাহ ( যে বিবাহে বরের পক্ষ হতে ছল ছাতুরি করে বলপূর্বক ভয় বৃত্তি দেখিয়ে যে বিবাহ হয় ) এই তিন প্রকার বিবাহে লব্ধ যে স্ত্রীধন আছে তা রেখে যদি কোনও স্ত্রীলোক নিঃসন্তান অবস্থায় মারা যায় তাহলে ঐ ধনের ঐ স্ত্রীর মাতার প্রথম অধিকার , কিন্তু স্ত্রীর মাতা মারা গেলে পিতাই অধিকার লাভ করবে । (মনুস্মৃতি :-৯/১৯৭)
স্ত্রিয়াস্তু যদ্ভবেদ্বিত্তং পিত্রা দত্তং কথঞ্চন ।ব্রাহ্মণী তদ্ধরেৎ কন্যা তদপত্যস্য বা ভবেৎ । ।
অনুবাদ:- কোনও ব্রাহ্মণের যদি ব্রাহ্মণ – ক্ষত্রিয়াদি নানা জাতিয়া স্ত্রী থাকে এবং তাদের মধ্যে যদি কেউ নিঃসন্তান অবস্থায় মারা যায় , তাহলে তার পিতৃদত্ত যা কিছু স্ত্রীধন থাজবে তা তার ব্রাহ্মণী সপত্নির যে কন্যা সে লাভ করবে , তার অভাবে ঐ কন্যার সন্তান ঐ ধন অধিকার লাভ করবে । (মনুস্মৃতি:-৯/১৯৮)
এবার কারা স্ত্রীধনের অধিকার লাভ করতে পারবে না ,বা নিষিদ্ধ, তার রেফরেন্স নিম্নে দেখুন ।পত্যৌ জীবতি যঃ স্ত্রীভিরলঙ্কারো ধৃতো ভবেৎ ।ন তং ভজেরন্ দায়াদা ভজমানাঃ পতন্তি তে ।।
অনুবাদ :- স্বামী জীবিত থাকা কালে স্ত্রীধন যে সব অলঙ্কার স্বামীর অনুমতি নিয়ে ধারণ করে ,স্বামীর মৃত্যুর পর ঐ স্বামীর ভ্রাতারা বা পুত্রেরা ভোগ করতে পারবে না ,যদি ভোগ করে তবে তারা পতিত হবে অর্থাৎ পাপী দায়ভাগী হবে ।( মনুস্মৃতি:-৯/২০০)

তাহলে দেখা যায় বর্তমাণ সমাজে অধিক পরিমানে স্ত্রীধন গুলো পতির পরিবারের সদস্যরা ছলছাতুড়ি করে সম্পদ ভোগ করে এমন কি সম্পদের ভাগ থেকে বঞ্চিত করে পতি হারা স্ত্রীকে যা শাস্ত্রে মনুস্মৃতিতে ৯/২০০ তে নিষিদ্ধ করেছে ,,।
এর পরের রেফারেন্সটি দেখি ,স্ত্রীধনানি তু যে মোহাদুপজীবন্তি বান্ধবাঃ ।নারীযানানি বস্ত্রং বা তে পাপা যান্ত্যধোগতিম্ ।।
অনুবাদ:- কন্যার পিতা, ভ্রাতা ,পতি প্রভৃতি আত্মীয় স্বজন মোহবশতঃ স্ত্রী ধন স্ত্রীযান এবং স্ত্রীলোকের বস্ত্রাদি উপভোগ করে , সেই পাপাচরণকারী আত্মীয়গন অধোগতি লাভ করে অর্থাৎ বিনাশ প্রাপ্ত হয় । (মনুস্মৃতি:-৩/৫২)তাহলে দেখা যাচ্ছে স্ত্রী জীবিত থাকা অবস্থাই স্ত্রী ধনে কেউই অধিকার লাভ করতে পারবে না।

(চলবে)

Please Share This Post in Your Social Media

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ দেখুন..